সুশিক্ষিত সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে বয়োজ্যেষ্ঠদের সম্মান করতে হবে

প্রকাশিত: ৮:২৪ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৫, ২০২১

সুশিক্ষিত সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে বয়োজ্যেষ্ঠদের সম্মান করতে হবে

এম জাকির হোসেনঃ

একটি সুশিক্ষিত সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে বয়োজ্যেষ্ঠদের সম্মান করতে হবে। এটা করা গেলেই আমরা সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে পারব। পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। তাদের এ পরামর্শ যেকোন ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। সুতরাং তাদের প্রতি একটু বেশি যতœশীল হওয়া প্রয়োজন। বিপদে-আপদে পাশে থেকে সহানুভূতি দেখালে তাঁরা অত্যন্ত খুশি হয়। এটা তাদের কাছে একটি বড় পাওয়া। তাদেরকে ভালো চোখে দেখলে আল্লাহ তায়া’লা আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হবেন এবং সেই সাথে আমাদের সামগ্রিক জীবন কল্যাণকর হয়ে উঠবে। বয়োজ্যেষ্ঠদের সাথে কথা বলার সময় স্বর নরম করে মার্জিত ভাষায় কথা বলা উচিত। এতে তাঁরা যেকোন বিষয় সহজে বুঝতে পারে। আবার তাদের কথাও মনোযোগ দিয়ে শোনা দরকার। আমরা অনেক সময় তাদের গুরুত্ব দিতে চাই না। যার ফলে তাঁরা মানসিক কষ্টের শিকার হন। আর এটা একজন মানুষের জীবনকে সমাপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিতে সহযোগিতা করে। তাই এসব বিষয়ে সবাইকে বেশি সচেতন হতে হবে। পারিবারিক ভাবে প্রতিটি পরিবারে অধিকাংশ সময় বয়োজ্যেষ্ঠরা অবহেলার শিকার হন। এটা আসলেই অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার! এই ‘অবহেলা’ শব্দটি তাদের ওপর মোটেও কাম্য নয়। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস তাদের জীবনে যন্ত্রণা হয়ে দাঁড়ায়। পরিবার, আতœীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের মধ্যে বয়স্কদের প্রতি কোন অবহেলা দেখানো উচিত নয়। তাদের সাথে সর্বদাই ভালো ব্যবহার করতে হবে। বর্তমান সময়ে অধিকাংশ পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ লোকেরা বিভিন্ন ভাবে অবহেলা-অনাদরের শিকার হচ্ছে। অপ্রত্যাশিত কথার মাধ্যমে তাদেরকে মানসিকভাবে আঘাত করা হয়ে থাকে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও গর্হিত কাজ। বিশেষ করে পিতা-মাতা যখন বয়স্ক হয়ে যায়, তখন সন্তান, পুত্রবধূ ও বাড়ির অন্যান্য লোক কর্তৃক বেশি আঘাত আসে। সময়ের পরিক্রমায় সন্তানরা তাঁদেরকে অবহেলা করে। এমনকি রোগ-শোকেও পাশে থাকতে চায় না। অথচ একজন বৃদ্ধ মানুষ এ বয়সটাতেই আপন-জনদের কাছ থেকে ভালো কিছু প্রত্যাশা করে। কিন্তু দিনশেষে হতাশা ছাড়া কিছুই মেলে না। এদিকে মানুষের শক্তি, বুদ্ধি হারিয়ে যায়। চুপসে যায় দেহের সকল চামড়া। এ কোন পাপের ফল? “না, এটা পাপের ফল নয়। এটা মন্দ ভাগ্য। বাবা মা খেয়ে না খেয়ে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে সন্তানদের জন্য ধনসম্পদ গড়ে তোলে। আর সেই সন্তানই কিনা তাদের দুঃখের ভাগিদার হতে চায় না! কিন্তু ঠিকই তাদের গড়া ধনসম্পদ অনায়াসে ভোগ করে। অথচ নিজ বাবা-মাকে একবেলা খাবার দিতেই নাই নাই স্বভাব করে। কী একটা দূরাবস্থা! কিন্তু সব পরিবারই যে খারাপ এমন নয়। এখনো সিংহভাগ পরিবারে সুখ-শান্তি আছে বলে মনে করি। সেসব পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠরাও সুন্দরভাবে জীবন-যাপন করে। আপাতত, এটাই সুসংবাদ। এতো গেল পারিবারিক, সামাজি ও অর্থনৈতিক দূরাবস্থার কথা। এখন রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বয়োজ্যেষ্ঠদের গুরুত্ব নিয়ে একটু বলি। রাজনীতি করা প্রতিটা মানুষের অধিকার। একটি সমাজ তথা রাষ্ট্রের জনগণের সমগ্রিক কল্যাণ, সুন্দর পরিকল্পনা ও সুদূরপ্রসারী নীতিমালার ওপর নির্ভর করে। আর এই দারুণ কাজটা রাষ্ট্রের বয়োজ্যেষ্ঠ নীতিনির্ধারকেরাই সম্পন্ন করে সাধারণ জনগণের মতামতের ওপর ভিত্তি করে। সুতরাং নিংসন্দেহে বলা যায় যে, বয়োজ্যেষ্ঠরা আমাদের সামগ্রিক জীবনব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই তাদের প্রতি সবসময় ইতিবাচক মনোভাব রাখতে হবে। কেননা, তারা পরিবার, সমাজ তথা সমগ্র রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ।