ঢাকা ৩০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২:১৮ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৪, ২০২১
এম জাকির হোসেনঃ
একটি মানবিক সমাজ গড়ার জন্য কি করতে হবে? বর্তমান পৃথিবীর প্রেক্ষাপটে এটি একটি জটিল প্রশ্ন। সুন্দর সমাজের জন্য সুন্দরের প্রত্যাশায় নির্মিত থিওরিগুলো এমন হাজারো অসুন্দরের জন্ম দেয়, যা সকলে মিলেও তার প্রতিরোধ করা যায় না। কারণ অত্যন্ত নিকট ইতিহাসে ঘটে যাওয়া দিবালোকের মতো স্পষ্ট একজন সুন্দর মানুষ এসেছিলেন নিকষ অন্ধকারে ডুবে থাকা জাজিরাতুল আরবের বুক চিড়ে, তপ্ত বালুকায় চিক চিক আলো রশ্মির ঢেউ তুলে মরু সাইমুম সম মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি নিয়ে এলেন মহান আল্লাহর তত্ত¡াবধানে লওহে মাহফুজে সংরক্ষিত আল কুরআন, ছড়িয়ে দিলেন শত বছরের অন্ধকারে ঘুমন্ত মানুষের ওপর, অন্ধকার দূরীভূত হলো, মানুষ জেগে উঠল একরাশ সুন্দর পৃথিবীর সোনালী আভায়। মুক সে মুখর হলো, পথহারা পেলো পথের দিশা। আল্লাহ বলেন, “আলিফ-লাম-রা। (হে মুহাম্মদ!) এটি একখান কিতাব, যা আমি তোমার প্রতি নাযিল করেছি, যেন তুমি মানুষদেরকে জমাট বাঁধা অন্ধকারসমূহ থেকে বের করে আলোতে লয়ে আস।” (সুরা ইবরাহিম : ১) আয়াতে লক্ষণীয় হলো যে, ‘নূর’ অর্থাৎ আলো শব্দটি এক বচন এবং ‘জুলুমাত’ অর্থাৎ অন্ধকার শব্দটি বহুবচন ব্যবহৃত হয়েছে। এর কারণ হলো, আলোর পথ হয় একটি আর অন্ধকারের পথ হয় অনেক। কারণ আলোর পথটি আলোকিত বিধায় এর গন্তব্যস্থল সুনির্দিষ্ট ও সুনিশ্চিত পক্ষান্তরে অন্ধকারে সুনিশ্চিত কোন পথ বাছাই করা অসম্ভব বিধায় এর পথ হয় অনেক। অন্ধকারে পথচলা ব্যক্তি আঁধারে হাতড়িয়ে যে কোন অনিশ্চিত পথের যাত্রী হতে পারে। পথটি তার জন্য ভাল-মন্দ উভয় হতে পারে। আল কুরআন হলো, সেই আলো যে আলোয় একজন লোক তাঁর সুনির্দিষ্ট গন্তব্যে খুব সহজেই পৌঁছে যেতে পারে। মানুষের কোন জ্ঞান নেই। শয়তানের বেড়াজাল পৃথিবীতে চলতে হলে মানুষের জ্ঞানের প্রয়োজন। কারণ শয়তান প্রকৃত আলোর পথকে আড়াল করে অসংখ্য কৃত্রিম আলোর পথ তৈরি করে রেখেছে। যেগুলো মূলতঃ অন্ধকারের পথ। প্রকৃত জ্ঞানের মালিক আল্লাহ তা’আলা তিনি দয়া করে আলোর পথে চলার জন্য মানুষকে দান করেছেন ‘আল কুরআন’ নামক জ্ঞানের মশাল। সেই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আরো মেহেরবানী এই যে, তিনি আজো অবিকৃত অবস্থায় সেই জ্ঞানের মশাল আমাদের মধ্যে জ্বেলে রেখেছেন। এটি মুসলমানদের জন্য একটি বিরাট ও বিশেষ নিয়ামত। কারণ এ ধরণের অবিকৃত আসমানী গ্রন্থ অন্য কোন জাতির-গোষ্ঠীর কাছে নাই। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, আমরা এ বিশাল নিয়ামতকে আজ অযতেœ অবহেলিত করে রেখেছি। এখানে অযতœ ও অবহেলার অর্থ হচ্ছে এই যে, কুরআনের সাথে যে ধরণের আচরণ করা দরকার তা আমরা করছি না। সমগ্র মানবজাতির কাছে কুরআনের দাবি হচ্ছে, মানুষ একে আত্মস্থ করবে, এর আলোকে তাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রকে বিনির্মাণ করবে। মানুষের সামগ্রীক জীবন ব্যবস্থাকে কুরআনের আলোকে রূপায়ন করা হলে, তবেই কুরআনের প্রতি সুবিচার করা হবে। কিন্তু কুরআনের সেই আহবানকে ভুলে গিয়ে একে সস্তা একখান কিতাবে পরিণত করেছি। যে আমাকে সমুদ্র দিতে পারে তার কাছে নদী দাবি করা মানে তার উন্নত মর্যাদার হানি করা। কুরআন আমাকে একটি সুন্দর পৃথিবী দিতে পারে, তার পরিবর্তে তার কাছে দশটি করে নেকী দাবি করা মানে তার শানের অমর্যাদা করা। আজকের পৃথিবী অশান্তির দাবানলে জ্বলছে। কোথাও শান্তি নাই-শান্তি নাই। শান্তির পিপাসায় মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন মতবাদের দ্বারস্থ হয়ে ব্যর্থ মনোরথ হয়ে বার বার ফিরে আসছে। মনে করুন বিশাল সমুদ্র, যার পানি দারুণ মিষ্টি, এর পাশে দাঁড়িয়ে কোন ব্যক্তি যদি তৃষ্ণার্ত হয়ে মরতে থাকে, তবে তার চেয়ে বড় বোকা আর কে হতে পারে ? সমুদ্র থেকে এক অঞ্জলি পানি পান করলেই তো তার তৃষ্ণা মিটে যায়। সারা পৃথিবীর মানুষ আজ শান্তির পিপাসায় কাতরাচ্ছে। এ পিপাসা নিবারণের জন্য চলে যাচ্ছে ড্রেনের পচা ও পূঁতিগন্ধময় পানির কাছে। তা পান করে রোগ-বালাই ও ব্যধি ছড়িয়ে পড়ছে মানুষের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বময়। ড্রেনের পচা পানি হলো মানুষের মনগড়া মতবাদ, যা মানুষের মস্তিষ্কপ্রসূত। অথচ লোকটি আগে দেখল না তার ঘরে পানি আছে কিনা। তার ঘরে যে পানি আছে তার নাম ‘আবে হায়াত’ তথা ‘আল-কুরআন’। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় আমাদের বিরাট জনগোষ্ঠী আল কুরআনের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। আমাদের অনেকে হয়ত কুরআনকে পড়তে পারি না অথবা যারা আমরা পড়তে পারি, তারা এর অর্থ জানি না, অথবা অর্থ জানলেও গভীরে প্রবেশ করে তার আবেদনে সাড়া দেই না। সারা বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমানদের দুরাবস্থার মূল কারণ কিন্তু এখানেই।
আমরা বিরাট এক ভুল ধারণা নিয়ে বসে আছি, তা হলোঃ ‘কুরআন বুঝা আমাদের কাজ নয়, এটি আলেম ওলামাদের কাজ।’ অথচ আল কুরআনের মালিক আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলছেন,“হে মানুষ! তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের নিকট হতে এসেছে উপদেশ, তোমাদের অন্তরে যে (রোগ) আছে তার আরোগ্য এবং মুমিনদের জন্যে হেদায়াত ও রহমত।”(সুরা ইউনুসঃ ৫৭) আল্লাহ তা’আলা বলেন “ইহা মানব জাতির জন্যে ব্যাখ্যা এবং মুত্তাকীদের জন্যে পথ নির্দেশ ও উপদেশ বাণী।” আল্লাহ বলেন, “তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে তোমাদের নিকট স্পষ্ট প্রমান এসেছে গেছে সুতরাং কেউ তা দেখলে তার দ্বারা সে নিজেই লাভবান হবে। আর কেউ না দেখলে সে নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমি তোমাদের তত্ত¡াবধায়ক নই।”(সুরা আনয়াম ঃ ১০৪) হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত রাসুল সাঃ বলেছেন, “যার অন্তরে কুরআনের কিছুই নেই সে পরিত্যক্ত ঘর তুল্য।” (সহীহ মুসলিম) আল-কুরআন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে সকল মানুষের হেদায়াতের মশাল, দুনিয়া ও আখিরাতের মুক্তির সনদ। এটি একক কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা দলের সম্পদ নয়। বরং কুরআন সকল মানুষের এক অতুলনীয় ও অমুল্য সম্পদ। যা অবতীর্ণ করা হয়েছে মানুষদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসার জন্য। আল-কুরআন হচ্ছে প্রত্যেকের শিক্ষক এবং বিজ্ঞ পরামর্শদাতা। তাই কুরআনকে বুঝতে হবে। কুরআনের সত্যিকারের রহমত ও সম্পদ আহরণ সম্ভব নয় যতক্ষণ পর্যন্ত না এর অর্থ বুঝা যায়। আল্লাহ বলেন,“এটি এক বরকতময় কিতাব, তোমার প্রতি নাযিল করেছি, যেন এই লোকেরা এর আয়াত সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে এবং জ্ঞান-বুদ্ধি ও বিবেকসম্পন্ন লোকেরা তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে।”(সুরা সাদ ঃ ২৯) “এতে অত্যন্ত শিক্ষামূলক সবক রয়েছে এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য, যার দিল আছে কিংবা যে খুব লক্ষ্য করে কথা বলে।”(সুরা কাফ ঃ ৩৭) মুসলিম দেশের সরকার প্রধানদের কাছে আবেদন এই যে, সকল প্রকার সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও দুর্নীতি বন্ধের লক্ষ্যে বিশেষত একটি মানবিক সমাজ উপহার দেয়ার জন্য আল-কুরআনকে বাধ্যতামূলক শিক্ষায় পরিণত করুন। আমি শতভাগ জোর দিয়ে বলছি সন্ত্রাস ও দুর্নীতি সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে সমূলে উচ্ছেদ হবেই হবে। মনে রাখা প্রয়োজন, আল- কুরআন ছাড়া আর যত নির্ভুল কর্মসূচী, কর্মনীতি ও কর্মপন্থা গ্রহণ করা হোক না কেন, তা সবই ভুল ও ত্রুটিপূর্ণ এবং পরিণতির দিক থেকে তা মানুষের জন্য ধ্বংসই ডেকে আনবে। কোথাও কি সন্ত্রাস ও দুর্নীতি কোন অংশে হ্রাস পেয়েছে? সুতরাং আল-কুরআনের দুয়ার খুলে দিন, তবেই আলোকোজ্জ্বল এক সোনালী সমাজের দেখা মিলবে।
তুহিন সিদ্দিকী
মানবতার ফেরিওয়ালা
এম জাকির হোসেন
যোগাযোগ: মনির উদ্দিন কমপ্লেক্স, উপজেলা রোড, সখীপুর, টাঙ্গাইল।
মোবাইল :০১৯১২-৬৩৫৯১৭ ইমেইলঃ newsjagosakhipur@gmail.com
মোখলেছুর রহমান যায়েদ, শিক্ষানবিশ আইনজীবী, জজ কোর্ট, ঢাকা
* বার্তা সম্পাদক : মোঃ রাহমাতুল্লাহ
© জাগো সখীপুর এ প্রকাশিত লেখা কপি করা নিষেধ